৮ ডিসেম্বর পটুয়াখালী মুক্ত দিবস । ১৯৭১ সালের এই দিনে পটুয়াখালী শহরকে হানাদার মুক্ত করে লাল সবুজের পতাকা ওড়ান পটুয়াখালীর সূর্য সন্তানেরা। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা সহ মাতৃভূমির সম্মান রক্ষার্থে জীবন বিলিয়ে দিয়েছিল অনেকে। আর স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫১ বছর অতিবাহিত হলেও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থান ও গণকবর গুলো সংস্কার করার দাবী মুক্তিযোদ্ধাদের।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাক সেনারা দেশব্যাপী পরিকল্পিত বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। গভীর রাতেই এ বার্তা এসে পৌঁছে পটুয়াখালী জেলা সংগ্রাম কমিটির হাতে। পরের দিন ২৬ মার্চ পটুয়াখালী মহিলা কলেজে কন্ট্রোল রুম খোলেন মুক্তিযোদ্ধারা। পাশের জুবিলী স্কুলে শুরু হয় মুক্তি সেনাদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণে যোগ দেয় স্থানীয় অকুতোভয় তরুণ যুবকরা। বর্তমান ডিসি বাংলোর পূর্ব পাশে পাক বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে ৭ আনসার ও মাতবর বাড়ির সামনে ১৭ মুক্তিসেনা শহীদ হন। ১৯৭১ সালের ২৬ এপ্রিল সোমবার। আকাশের উত্তরদিক থেকে গগণবিদারী আওয়াজ তুলে ধেয়ে আসে বেশ কয়েকটি পাকিন্তানি জঙ্গী বিমান। বৃষ্টির মতো গোলাবর্ষণ, শেলিং ও মেশিনগানের গুলি ছুঁড়ে ধবংস করে দেয় পটুয়াখালী শহর। পটুয়াখালীর পুরনো বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় ঘর-বাড়ি। চাঁদমারী, কালিকাপুর, মাতবর বাড়ি, ও ডিসি বাংলোর দক্ষিন পাশে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে হাজারও মানুষ।
৭ ডিসেম্বর রাতে পটুয়াখালী ও বরগুনা অঞ্চলে যুদ্ধকালীন সময়ে পাক হানাদার বাহিনীর দায়িত্বে থাকা মেজর নাদের পারভেজ ও তার সৈন্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পটুয়াখালী শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়।
৮ ডিসেম্বর সকাল থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে জেলা শহরে মিছিল নিয়ে আসতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথমে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ও পরে বর্তমান আলাউদ্দিন শিশুপার্ক মাঠে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন মুক্তিযোদ্ধারা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসনকান্তি দত্ত জানান, আমরা চেতনার কথা বলি আসলেই কি আমাদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আছ। এখন বিভিন্ন মাধ্যমে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা তৈরী হচ্ছে। সরকারের কাছে আবেদন যাতে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা তালিকা ভূক্ত হয় এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য গণকবর গুলোকে সংরক্ষনের ব্যবস্থা করা।
পটুয়াখালী জেলা আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব এ্যাড. সুলতান আহমেদ মৃধা জানান, ২৫ মার্চ পাক সেনারা দেশব্যাপী পরিকল্পিত বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ শুরু খবর পেয়ে আমরা জেলা সংগ্রাম কমিটির মাধ্যমে জুবিলী স্কুলে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ি। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষনে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা সবাই যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ি।
পাকা সেনারা মাতবর বাড়ী ও ডিসি বাংলার সামনে আনসার সহ নিরিহ মানুষদের নির্বিচারে হত্যা করে। যুদ্ধকালীন সময়ে পাক হানাদার বাহিনী শহরের জেলা কারাগারকে তাদের নির্যাতন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করতো। সে সময়ে কয়েকশ নিরীহ মানুষকে হত্যা করে কারা অভ্যন্তরে মাটি চাপা দেয়া হয়। বর্তমানে কারাগারটি ব্যবহৃত হচ্ছে আনসার ব্যাটালিয়নের ক্যাম্প হিসেবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধি, সরকারি ঘর প্রদান সহ বিভিন্ন ভাবে সুযোগ সুবিধা প্রদান করে আসছে। তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থান ও গণকবর গুলো সংস্কার করা প্রয়োজন এবং একটি বই আকারে প্রকাশ করা দরকার।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক সুবিধা দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় পটুয়াখালীর যে গণকবরগুলো এখনও সংরক্ষন করা হয়নি তা পর্যায়ক্রমে সংরক্ষন ও আধুনিকায়ন করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা হবে।