পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবন নির্মিত না হওয়ায় শয্যা সংকটে দূর্ভোগ কাটছেনা দুমকীবাসির। ৩১ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০১৯ সালে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও এর সুফল পাচ্ছেনা দুমকীর লক্ষাধিক জনগোষ্ঠী। সে লক্ষে পুরাতন জরাজীর্ণ ভবনের পিছনে নতুন ভবন নির্মাণ ও পুরাতন ভবন মেরামতের জন্য ২০২১ সালে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর দরপত্র আহŸান করে ঠিকাদার নিযুক্ত করলেও ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফেলতির কারণে নির্মিত হয়নি ভবন। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়াসহ বিভিন্ন অযুহাতে কাজ করতে অসম্মতি জানিয়ে স্বাস্থ্য প্রকৌশল পটুয়াখালী অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবরে লিখিত দেন। ২০২১ সালের ৩ জুন তারিখে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত পত্রাদেশে মেসার্স পোদ্দার এন্টারপ্রাইজকে কার্যাদেশ দিয়েছিলো। যার প্রাক্কলিত মূল্য ধরা হয়েছিলো ১৪ কোটি ৬৯লক্ষ ২২ হাজার ১শত তেত্রিশ টাকা।এবং আঠারো মাস সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিলো। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে যার মেয়াদ শেষ হয়েছে। সরেজমিন দেখা যায় শুধু মাত্র নতুন ভবন নির্মাণের লক্ষে কয়েকটি টেস্ট পাইল বসানোর পরে আর কোন কাজ না করেনি ঠিকাদার । পুরাতন ভবনের পিছনে টেস্ট পাইল বসানোর ফলে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে এবং পানি জমে থাকায় মশা প্রজননের কারখানায় পরিনত হয়েছে। এমনিতেই পটুয়াখালী জেলার মধ্যে দুমকী উপজেলা ডেঙ্গু আক্রান্তে শীর্ষ অবস্থানে আছে। হাসপাতালের পাশেই এরকম দৃশ্য কারোরই কাম্য নয়। বৃষ্টির পানি নেমে যাওয়ার কোন ব্যবস্থা না থাকায় মশা বংশবিস্তার করছে।স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, দুমকী উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক জনগোষ্ঠী ও পাশ্ববর্তী উপজেলা বাকেরগঞ্জের নলুয়া এলাকার লোকজন এখানেই স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে থাকেন। প্রতিদিন গড়ে তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ রোগী বর্হিবিভাগে স্বাস্থ্য সেবা নিচ্ছেন এবং ভর্তি থেকে স্বাস্থ্যসেবা নিচ্ছেন। নতুন ভবন না থাকায় এবং প্রয়োজনীয় জনবল সংকটের কারণে পর্যাপ্ত সেবা দিতে পারছেননা বলে জানিয়েছেন কতৃপক্ষ। প্রায়শই ৩১ শয্যার বিপরীতে পঞ্চাশ ষাটজন রোগী ভর্তি থেকে সেবা নিতে দেখা গেছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিকটবর্তী বাসিন্দা মো. নজরুল ইসলাম জোমাদ্দার বলেন, বর্তমানে দুমকীতে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। ঠিকাদার কাজ না করে দীর্ঘদিন গর্ত করে ফেলে রাখায় জলাবদ্ধতায় মশার জন্ম হচ্ছে। আমরাও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছি।যে কোন উপায়ে জলাবদ্ধতা নিরসন করা দরকার।
শ্রীরামপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. বাকের আলী বাবুল বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে শয্যা সংকটে আমাকে হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসা নিতে হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মীর শহিদুল হাসান শাহীন বলেন, ঠিকাদার সময়মত কাজ না করায় আমরা বিব্রত। এ বিষয়ে বহুবার উর্ধতন কতৃপক্ষকে অবহিত করেছি।শয্যা সংকটের কারণে জনগণকে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা দিতে পারছিনা। জনবল সংকটের বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মীর শহিদুল হাসান শাহীন জানিয়েছেন পঞ্চাশ শয্যার প্যাটার্ন অনুযায়ী জনবল বৃদ্ধির চাহিদা পত্র উর্ধতন কতৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে। পর্যাপ্ত ডাক্তার থাকার পরেও শয্যা সংকটে স্বাস্থ্যসেবা ব্যহত হচ্ছে।
দুমকী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ড. হারুন অর রশীদ হাওলাদার জানান, তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে যথা সময়ে কাজ না করে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাÐ ব্যহত ও ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে।অতিসত্বর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর নতুন ভবন নির্মাণ করে জনভোগান্তি দূর করতে কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর পটুয়াখালী অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আলতাফ হোসেন সমকালকে বলেন, ২০২১ সালে পোদ্দার এন্টারপ্রাইজকে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছিলো। ভূমি অধিগ্রহণ করতে বিলম্ব হওয়ায় এবং দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করতে অসম্মতি জানালে কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে। অচিরেই নতুন দরপত্র আহŸান করে কাজ সম্পন্ন করা হবে।