স্টাফ রিপোর্টার ঃ পটুয়াখালীতে ঘূর্নিঝড় ইয়াশের প্রভাবে তেমন কোন ক্ষতি না হলেও উচ্চ জোয়ারের তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে পটুয়াখালীর উপকূলীয় এলাকা। পুরনো ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করে পানিবন্ধী হয়েছে পড়েছে জেলার ১১৫টি গ্রামের প্রায় ৩ লক্ষ মানুষ। নতুন করে ভাঙ্গিন দেখা দিয়েছে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার বেরিবাধে। ভেসে গেছে ২৬ শ’ ৩২টি পুকুর ও ৫শ’ ৯০টি মাছের ঘের। এতে মৎস্য খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫০ কোটি টাকার। পূর্নিমার জোয়ে’র প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৪ ফুট উচ্চ জোয়ারের পানিতে জেলার সদর উপজেলায় ১৫টি, বাউফল উপজেলায় ২০টি, দুমকি উপজেলায় ১২টি, দশমিনায় ১০টি, মির্জাগঞ্জে ১৫টি, গলাচিপায় ৯টি, কলাপাড়ার ২৪টি ও রাঙ্গাবালী উপজেলার ১৮টি গ্রামের মানুষ পানবন্দী হয়ে পড়ে। মঙ্গলবার সকাল থেকে এসব গ্রামের মানুষ পানিবন্ধী অবস্থায় রয়েছে। ওই রাতেই দ্বিতীয় দফা জোয়ারের তান্ডবে অনেক ঘরেই জ্বলেনি উনুন। শিশু-বয়স্কসহ অসংখ্য মানুষ রাত কাটিয়েছেন না খেয়ে। পানিবন্ধী এসব এলাকার সড়ক যোগাযোগও ব্যবস্থা হয়ে পড়েছে বিচ্ছিন্ন।
উচ্চ জোয়ারের কারণে নতুন করে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে কলাপাড়ার নিজামপুরের সদ্য র্নিমিত বেরিবাঁধে। বাঁধের ৬টি পয়েন্টে ভাঙ্গন দিয়ে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হচ্ছে সুধীরপুর, নিজামপুর, কমরপুরসহ আশেপাশের এলাকা। যেকোন সময় ভেঙ্গে যেতে পারে নীলগঞ্জ ইউনিয়নের নিজকাটা সুইজগেঠের বাঁধ।
ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে কলাপাড়ার চম্পাপুর ইউনিয়নের দেবপুর বোরিবোঁধে। ইউপি চেয়ারম্যান রিন্টু তালুকদার জানান, মঙ্গলবার দুপুরে প্রায় আড়াই কিলোমিটার বেরিবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছে দেবপুর, চালিতাবুনিয়া, পাঁচজুনিয়া। লালুয়ার চান্দুপাড়ার অংশের বেরিবাঁধে নতুন করে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এমন তথ্য দিলেন লালুয়ার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মীর তারিকুজ্জামান তারা। তিনি বলেন, এত করে লালুয়ার অনেক গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে। মৎস্য অফিস জানায়, উচ্চ জোয়ারে বেরিবাঁধের বাহিরে ও ভেতরে ২ হাজার ৬’শ ৩২টি পুকুর ও ৫৯০টি মাছের ঘের তলিয়ে মাছ ভেসে গেছে। এসব ঘের ও পুকুরের মালিকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন। রাঙ্গাবালী চরলতা গ্রামের মাছের ঘের মালিক দবির গাজী জানান, চলতি বছর ঋন নিয়ে মাছের ঘের করে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৬ লাখ টাকার মাছ চাষ করেছেন। তার ঘেরের সব মাছ ভেসে গেছে।
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্লাহ বলেন, সরজমিন পরিদর্শনে দেখেছি কিছু পুকর ও ঘের মালিক জাল দিয়ে মাছ রক্ষা করতে পেরেছে। কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী উপজেলার মৎস্য চাষীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এতে প্রায় ৪৮ কোটি ৯১ লক্ষ টাকার মাছের ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে ৪৬ কোটি চিংড়ি ঘেরের ক্ষতি হয়েছে। তবে ক্ষতির পরিমান আরও বাড়বে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়া সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হালিম ছালেহী জানান, যে সকল রেরিবাঁধ ঝুঁকিতে রযেছে সেখানে বালু ভর্তি জিওব্যাগ ফেলে বাঁধ রক্ষা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিসংখ্যান নিররূপন করে ক্ষতিগ্রস্থ এসব পরিবারকে সহযোগিতা করা হবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।