বাউফল প্রতিনিধিঃ বাউফলের চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে দুই মেম্বর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষের দায়ের করা মামলায় পুলিশের ভয়ে এলাকাটি এখন পুরুষ শূণ্য হয়ে পড়েছে। ফলে অর্ধাহার-অনাহারে দিনাতিপাত করছে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলো। তাদের শিশু সন্তানদের নিয়ে সংসার চালাতে এখন হিমসিম খাচ্ছে।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১৫ এপ্রিল বেলা ১০ টার দিকে চর মিয়াজান গ্রামের ইবতেদায়ী মাদ্রাসার দক্ষিণ পাশে একটি কালভার্টের নিচে বর্তমান মেম্বর কামাল সিকদারের সমর্থক কালু হাওলাদার, তার স্ত্রী আকলিমা বেগম, কামাল হাওলাদার, আলম সিকদার, ছালাম হাওলাদার, আফরোজা বেগম, রেহেনা বেগম এবং স্বপন হাওলাদারসহ ২০/২৫ জনের একটি দল রাম দা, লোহার রড, সাবল, লাঠিসোটা এবং মরিচের গুঁড়া নিয়ে অবস্থান করছিল। ওই সময় মেম্বর কামাল সিকদার কালভার্টের পাশের একটি বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। বেলা সোয়া ১০টার দিকে ওই ওয়ার্ডের মেম্বর প্রার্থী বাবুল হাওলাদারের সমর্থক হাসান দর্জি ওই কালভার্টের ওপর দিয়ে যাচ্ছিল। এসময় কামাল সিকদারের সমর্থকরা হঠাৎ তার পথরোধ করে তাকে বেধরক মারপিট করে। পাশের ক্ষেতে কাজ করা কৃষক আলী খাঁন, খালেক মৃধা, সোহেল রাড়ী ও ইউসুফ মৃধা ওই ঘটনা দেখে হাসানকে রক্ষা করতে এগিয়ে এলে কামাল সিকদারের সমর্থকরা তাদের ওপর মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে এবং দা দিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর জখম করে রাস্তায় পাশে ক্ষেতে ফেলে রাখে। এঘটনার পর কামাল সিকদার পাশের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বাবুল সিকদারের বিদেশ ফেরত ছেলে জিয়াউর রহমানকে মোবাইল ফোনে কালভার্টের কাছে আসতে বলেন। জিয়াউর রহমান ঘটনাস্থলে এলে কামাল সিকদার তার সাথে থাকা রাম দা দিয়ে অতর্কিতভাবে জিয়াউর রহমানের মাথায় কোপ দেয়। দায়ের কোপে জিয়াউর রহমান গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়ে অজ্ঞান হয়ে পরে গেলে কামাল সিকদার তাকে লাথি মেরে পাশের ক্ষেতে ফেলে দিয়ে মটর সাইকেলযোগে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। মারামারির ঘটনা শুনে স্থানীয়রা জিয়াউর রহমানকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে আকলিমা বেগমসহ অন্যান্যরা আবারো তাদের ওপর মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে লোহার রড, সাবল ও লাঠিসোটা দিয়ে তাদেরকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। এক পর্যায় গ্রামবাসিরা একত্রিত হয়ে আকলিমা বেগম ও তার সহযোগিদের কালভার্ট থেকে হটিয়ে জিয়াউর রহমানকে উদ্ধার করে প্রথমে বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স,পরে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ এবং সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করান। এঘটনায় উভয় পক্ষ এলাকার প্রায় ৪০/৪৫ জন নারী পুরুষকে আসামি করে ৪টি মামলা করেন। মামলার পর পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত কয়েকজনকে আটক করতে পারলেও এখনো অনেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘটনার সাথে জড়িত নয় এমন অনেককে পুলিশ গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন। এদের মধ্যে আজিজুল হক(৪৫), শাহ আলম গাজী (৫০), পারভেজ মীর (৩৫), ইউসুফ মৃধা ((৩৫),মনির মৃধা ((৩৫), হৃদয় বিশ্বাস (১৯) এবং জাফর মৃধা (৪০) সহ অনেকে রয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা মোসা. ডলি বেগম, মিনারা বেগম, নাজমা বেগম, ইউসুফ মৃধা এবং সোহেল রাড়ীসহ অনেক নারী-পুরুষ জানান, এরকম ঘটনা ঘটানোর জন্য কামাল সিকদার পূর্ব থেকেই পরিকল্পনা করে মহিলা হিসেবে আকলিমা বেগমকে মূখ্য ভূমিকায় রেখেছিল। কিন্তু গ্রামের সহজ সরল মানুষ তার পরিকল্পণা বুঝতে পারে নাই।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, কামাল সিকদার মেম্বর হয়ে গত পাঁচ বছরে দুর্ধর্ষ হয়ে উঠেছিলেন। এলাকায় একোচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছিল। তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতো না। সে এলাকায় ডন বলে পরিচিত ছিল। কামাল সিকদার মোসা. চান বরু বেগম (২৬) নামের এক নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা মামলার আসামি। ওই মামলায় কামাল সিকদার জেলও খেটেছেন। শাহ আলম গাজী নামের এক কৃষক জানান, কামাল সিকদারের বিরুদ্ধে হওয়া ধর্ষণ মামলায় স্বাক্ষী হওয়ায় তাকে মামলার আসামি করা হয়েছে। সরেজমিন দেখা গেছে, বর্তমানে ওই গ্রামটির প্রায় সব ঘরেরই পুরুষ লোক পুলিশের ভয়ে পলাতক রয়েছেন। পুরুষ না থাকায় নারীরা সংসার চালাতে পারছে না। শিশু সন্তান নিয়ে তারা এখন অর্ধাহার-অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। সাংবাদিক পরিচয় জেনে তারা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তবে অনুসন্ধানকালে কামাল সিকদার কিংবা তার কোন সমর্থকদের খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বাউফল থানা সূত্রে জানা গেছে, চর মিয়াজানের ঘটনায় বাবুল হাওলাদার ও নাসির খাঁন বাদী হয়ে কামাল সিকদার গংদের বিরুদ্ধে দুটি এবং কামাল সিকদারের পক্ষে সালাম হাওলাদার ও আ.আলী খাঁন দুটি মামলা করেছেন।